পারিবারিক জমি দ্বন্দের জেরে আপন চাচাতো ভাইদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক যুবক। ভাইদের হামলার শিকার হয়ে বর্তমানে মুমুর্ষ অবস্থায় দিন পার করছেন ওই যুবক। এতে আতঙ্কে রয়েছে তার পরিবার-পরিজনরা। এদিকে এ ঘটনায় আহত যুবকের পিতা ৭ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করলেও ২নং আসামী বাদে আদালত থেকে একে একে সকলে জামিন পেয়ে বাড়ীতে এসে আবারও হুমকি-ধামকি প্রদান করে চলেছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগি পরিবারের সদস্যরা। হামলার শিকার যুবকের স্ত্রী’র অভিযোগ, তার স্বামীকে প্রাণে মেরে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হলেও আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়িয়েছে, পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি। ফলে মামলার একজন আসামী বাদে বাকী সকল আসামী আদালত থেকে জামিন পেয়েছে। দ্রুত পলাতক আসামীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান তিনি। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, চিলারং মৌজায় পারিবারিক ১৩ শতাংশ জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিলো ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল হক ও তার ভাই আনিছুর রহমান এর পরিবারের মধ্যে। বিরোধের জেরে আবুল হক ওই জমির উপর ১৪৪ ধারা আনয়ন করতে আদালতের দ্বারস্থ হন। সে মোতাবেক আদালত ওই জমির উপর ১৪৪ ধারা জারিও করে। কিন্তু আনিছুর ও তার সন্তানেরা ( ওমর ফারুক, শামীম ইসলাম, মো: মামুন) গত ৩১ জুলাই ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে ওই জমিতে ধান রোপন করেন, এতে বাঁধা দিতে গেলে আবুল হক ও তার স্ত্রী’র উপর হামলা চালায় প্রতিপক্ষরা। খবর পেয়ে আবুল হকের ছেলে আ: রাজ্জাক পিতা-মাতাকে উদ্ধারের জন্য অটোযোগে ঘটনাস্থলে গেলে আনিছুর রহমান ও তার স্ত্রী-সন্তানেরা সংঘবদ্ধ হয়ে দেশিয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে আ: রাজ্জাকের উপর হামলা চালান। তাদের হামলায় এক পর্যায়ে আ: রাজ্জাক মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয়রা রাজ্জাকসহ তার বাবা-মাকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখান থেকে রাজ্জাকের পিতা-মাতা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ীতে ফিরতে পারলেও রাজ্জাককে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। বর্তমানে আ: রাজ্জাক নিউরোলোজি চিকিৎসক ডা. তোফায়েল আহম্মেদের তত্বাবধানে রয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সাহেদা খাতুন, ফরিদা খাতুন, বাতেন সহ আরও অনেকে জানান, জমির দ্বন্দে চাচাতো ভাইদের হামলায় আ: রাজ্জাকের অবস্থা খুবই খারাপ। সে স্বাভাবিকভাবে হাটা-চলা করতে পারে না, সারাদিন শুয়ে শুয়ে মানুষের দিকে চেয়ে থাকে। ঘটনার দিন তাদের সামনেই আনিছুর রহমানের ছেলে ওমর ফারুক, শামীম, মামুন সহ ৭-৮জন মিলে তাদেরই চাচাতো ভাই আ: রাজ্জাককে বেদম প্রহার করে। এক পর্যায়ে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আ: রাজ্জাকের স্ত্রী জানান, তার স্বামীর শারীরিক অবস্থা মোটেও ভালো নয়। তার বাম চোখে ফোলা জখম হয়েছে এবং সমস্ত শরীরে কালশিরা জখমী দাগ রয়েছে। কতদিনে তার স্বামী স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে তার কোন হদিস নেই। এদিকে আসামীরা জামিনে বেড়িয়ে এসে আবারও হুমকি-ধামকি প্রদান করতে থাকায় চরম আতঙ্কে দিন পার করছেন তারা। তিনি অপরাধীদের গ্রেফতার সহ তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান।
আ: রাজ্জাকের পিতা আবুল হক জানান, আমরা অনেক আতঙ্কে রয়েছি। এতোবড়ো ঘটনা ঘটার পরও আসামীদের পুলিশ আটক না করায় তারা এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এবং জামিন নিয়ে এসে আমাদেরকেই উল্টো ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। আমি আমার সন্তানের উপর অমানবিক হামলায় জড়িতদের কঠিন শাস্তির দাবি জানাই।
এ বিষয়ে মামলার ২নং আসামী ও হামলার শিকার আ: রাজ্জাকের চাচাতো ভাই মো: শামীম এর সাথে কথা হলে তিনি জমি নিয়ে দ্বন্দের কথা স্বীকার করলেও মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। চাচার দায়ের করা মামলায় ইতিমধ্যে তিনি বাদে সকলে জামিন নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিরণময় রায় জানান, মামলার আইও হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি মাঠ পর্যায়ে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। তদন্ত চলমান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে মামলার অনেকে আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। তবে ঘটনার মূল অপরাধী এখনো পলাতক রয়েছে, তাকে ধরতে তিনি কাজ করছেন বলেও জানান।
ডেস্ক/বিডি
কপি করলে খবর আছে