ঠাকুরগাঁওয়ে বিনা অনুমতিতে বিদ্যালয়ের দুটি ফলজ (কাঁঠাল) গাছ কাটায় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। গত রবিবার (৩০ জুলাই) অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকাকে এক নোটিশের মাধ্যমে এ কৈফিয়ত তলব করা হয়। অনুমতি বিহীন গাছ কাটার ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ২৪ নং লস্করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
এলাকাবাসির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন তদন্তপূর্বক এ কৈফিয়ত তলব করেন সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোছা. রুনা লায়লা। তবে ঘটনার সাথে জড়িত অপর সহযোগি ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক গৌড় চন্দ্র ও গাছের ক্রেতা এবং গড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মজিবর রহমানের বিরুদ্ধে কোনরূপ ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসি।
জানা যায়, গত ২৯ জুলাই সদর উপজেলার ২৪ নং লস্করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আয়েশা সিদ্দিকা ও সহকারি শিক্ষক গৌড় চন্দ্র যোগসাজেশ করে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মজিবর রহমানের কাছে গোপনে বিদ্যালয়ের গাছগুলো বিক্রি করেন। ওইদিন সকাল সাড়ে দশটার দিকে ইউপি সদস্যর লোকজন বিদ্যালয়ে গিয়ে রীতিমতো গাছ কাটা শুরু করে। এক পর্যায়ে দুটি কাঁঠাল গাছ কেটে ফেললে বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে আসে। এসময় তারা গাছ কাটার লোকজনদের কাছে গাছ কাটার অনুমতিপত্র দেখতে চান। গাছ কর্তনকারিরা অনুমতিপত্র দেখাতে ব্যর্থ হলে স্থানীয়রা বিষয়টি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে অবগত করে। মুঠোফোনের অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একজন সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠান। সাথে সাথে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এক সহকারি কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গেলে ঘটনার সত্যতা পান। এরই প্রেক্ষিতে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আয়েশা সিদ্দিকাকে ৩০ জুলাই এক নোটিশের মাধ্যমে এ ঘটনার কৈফিয়ত তলব করেন।
এদিকে ঘটনার দিন থেকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকা আয়েশা সিদ্দিকা। তবে অনুমতি না নিয়ে গাছ কর্তন করা ভূল হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষক গৌড় চন্দ্র। তিনি জানান, বিদ্যালয়ে প্লাষ্টিকের চেয়ারে বসতে আর ভালো লাগে না, তাছাড়া বিদ্যালয় পরিদর্শনে কর্মকর্তারা আসলে চেয়ার সংকট দেখা দেয়, তাই তারা বিদ্যালয়ের গাছ কেটে কাঠের চেয়ার বানানোর পরিকল্পনা করেছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ওই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য তৌফিকউদ্দিন, মোজাহিদুর রহমান ও আশরাফ আলী সহ আরও কয়েকজন জানান, বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক গৌড় ও প্রধান শিক্ষিকা আয়েশা সিদ্দিকা অসৎ উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে বিদ্যালয়ের ফলজ গাছগুলো কেটে ফেলতে চেয়েছিলেন, আর এই গাছের ক্রেতা বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মজিবর রহমান। তারা আরও বলেন, বিদ্যালয়টি অনিয়ম আর দূর্ণীতিতে ভরপুর। গোপনে গাছ বিক্রির পরিকল্পনা স্থানীয়রা ধরতে পারায় এখন তারা বিষয়টি অস্বীকার করছে। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. রুনা লায়লার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে, আমরা অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা কার্যালয়কে অবহিত করেছি।
ডেস্ক/বিডি
কপি করলে খবর আছে