ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় এক রাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাঁচটি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। রোববার ভোর রাতের কোনো এক সময় দূর্বৃত্তরা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা স্থানীয়দের। এ ঘটনায় ওইসব এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জানা যায়, বালিয়াডাঙ্গীর পাড়িয়া ইউনিয়নের জাউনিয়া কলেজপাড়া গ্রামে একটি, চাড়োল সাবাজপুর পশ্চিমনাথপাড়া মোড়ে একটি ও ধনতলা ইউনিয়নে সিন্দুরপিন্ডি গ্রামের তিনটি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করে দূর্বৃত্তরা।
ধনতলা ইউনিয়নের পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সিন্দুরপিন্ডি মন্দির কমিটির সভাপতি জোর্তিময় সিংহ বলেন, প্রায় অর্ধশত বছর ধরে আমরা মন্দিরে পূজা করে আসছি। কোনো দিন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ধারণা করা হচ্ছে রোববার ভোর রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে এই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আতঙ্কে রয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি জানান তিনি।
চাড়োল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিলিপ কুমার চ্যাটার্জী বলেন, কে বা কারা রাতের আঁধারে রাস্তার ধারে থাকা পাঁচটি মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করেছে। সকালে মন্দির কমিটির লোকজন খবর দিলে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রশাসনকে অবগত করি।
এদিকে খবর পেয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি রবিবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মো: মাহাবুবুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল কুমার, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আসলাম জুয়েল, বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি খায়রুল আনাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জাতীয় হিন্দু মহাজোট, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও লাহিড়ী ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক সুজন ঘোষ বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। সরকারের উচিত ডিজিটাল মেশিনে মোবাইল লোকেশন ব্যরহার করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা। তা নাহলে বিচারহীনতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।
বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ, ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সভাপতি ও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. অরুণাংশু দত্ত টিটো বলেন, এক রাতে এতোগুলো মন্দিরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। সামনে জাতীয় নির্বাচন, এ নির্বাচনে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে ও নির্বাচনের পরিবেশ ঘোলাটে করতে পরিকল্পিতভাবে এ ধরণের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায় তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দেশের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এ ঘটনা উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে ঘটানো হয়েছে বলে আমরা মনে করছি। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। দ্রুতই জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।এসময় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে আতঙ্কিত না হয়ে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতার কথা বলেন তিনি।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মো: মাহাবুবুর রহমান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সচেতনমূলক পদক্ষেপ নেবে।
বিডি/ডেস্ক
কপি করলে খবর আছে