ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শুখানপুকুরী ইউনিয়নের ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের “সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে দরিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের” গাছের টাকা পুরোপুরি সদস্যদের না দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সাবেক ইউপি সদস্য বাবলুর বিরুদ্ধে।
বাংরোট গ্রামের ভুক্তভোগী সদস্য হিরেন, দেখন, কলেজ, দিপেন, ধৈর্য্য, এরশাদ, কাউসার, দীগেন, সমারীর নাতি পলাশসহ বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে জানান, সরকার বন বিভাগের মাধ্যমে “সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে দরিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের” আওতায় উল্লেখিত ৩টি ওয়ার্ডের ৫০ জন সদস্য প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। পরে তারা এলাকার রাস্তার ২ পাশে গাছ লাগিয়ে দীর্ঘদিন পরিচর্যা করেছেন। প্রকল্পের মেয়াদান্তে গাছগুলি বিক্রি করা হলে পাশ্ববর্তী কার্তিকতলা বাজারের রাজশাহী কৃষি ব্যাংকের শাখার প্রত্যেক সদস্যের ব্যাংক একাউন্টে ৩০ হাজার ১৮৩ টাকা করে পাঠানো হয়। প্রত্যেকে নিজেদের মোবাইলে মেসেজও পায়। কিন্তু সাবেক মেম্বার বাবলু প্রত্যেকের কাছে বিভিন্ন কথা বলে ভূল-ভাল বুঝিয়ে চেকের পেছনে তাদের স্বাক্ষর নিয়ে পুরো টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নেয় এবং প্রত্যেক সদস্যর কাছ থেকে ১৩ হাজার টাকা করে কেটে নিয়ে ১৭ হাজার টাকা করে তাদের প্রদান করেন।
বাংরোট গ্রামের ভুক্তভোগী সদস্য দিপেন বলেন, আমাদের ৩০ হাজার টাকার মধ্যে ১৭ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকাটা কেন কেটে নেওয়া হলো, আমরা এর বিচার চাই। বাবলু মেম্বার গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে এ এলাকার মানুষদের ভোট দিতে যেতে দেননি। ভুক্তভোগী অপর সদস্য দীগেন বলেন, আমার ছেলে আপন শিক্ষিত, তাই সে মোবাইলে টাকার মেসেজ পেয়ে নিজে ব্যাংকে গিয়ে পুরো টাকা তুলে নিয়ে আসে। কিন্তু পরক্ষণেই বাবলু মেম্বার এসে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিয়ে আমাকে ১৭ হাজার টাকা দিয়ে বাকি ১৩ হাজার টাকা ফেরত নিয়ে গেছেন।
এ বিষয়ে জানতে শুখানপুকুরী ইউনিয়নের বাংরোট গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মো: বাবলুর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার পর ফোন রিসিভ করেই বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না এবং সাংবাদিকদের সাথে কথা বলবেন না বলে ফোন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে শুখানপুকুরী ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান জানান, এ ঘটনার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমার পরিষদ যেটুকু অংশ পাবে সেটি পেয়েছি; শেষ। আমি বাবলুকে জানিয়েছি যারা গাছ লাগিয়েছে তারা যাতে সম্পুর্ন টাকাটা পায়।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সামাজিক বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: সফিউল আলম মন্ডল বলেন, সামাজিক বনায়ন বিধিমালা অনুযায়ী প্রত্যেক সদস্যের নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে তাদের সম্পুর্ন টাকা পাঠানো হয়েছে। তারা সেটি মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে জানতেও পেরেছেন। এখন যদি তারা টাকা নিজে না উঠিয়ে কাউকে দিয়ে উঠিয়ে নেন, সেটা তাদের ব্যাপার। কেউ যদি বন বিভাগের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা পয়সা গ্রহন করে তার দায়-দায়িত্ব তাদের।
এ ব্যাপারে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের শুখানপুকুরী ইউনিয়নের কার্তিকতলা শাখার ব্যবস্থাপক মো: ইকবাল হোসেন বলেন, ব্যাংকের জানালার পাশে এসে বেশিরভাগ সদস্য তাদের টাকা ওই ব্যক্তিকে দিতে বললে দেওয়া হয়। এছাড়াও অনেকেই নিজেই এসে তাদের টাকা তুলেছেন। নিয়ম মেনেই সদস্যদের টাকা প্রদান করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের জোনাল ম্যানেজার অনুকুল চন্দ্র সরকার বলেন, একজন সদস্যের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই শাখায় গিয়ে জেনেছি; ওই ব্যক্তির টাকা তার ছেলে তুলেছেন। ব্যাংকের বাহিরের টাকা ভাগ-বাটোয়ারার দায় ব্যাংকের থাকে না। তবে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের বেশিরভাগ সদস্যের টাকা একজন ব্যক্তি তুলে থাকলে সেটা সঠিক হয়নি। বিষয়টি জানলাম, পরবর্তীতে বিস্তারিত জেনে ব্যাংকের কোন অনিয়ম থাকলে খতিয়ে দেখা হবে।
ডেস্ক/বিডি
কপি করলে খবর আছে