নদী দখল করে চলছে ধান চাষ; নাব্যতা ফেরাতে সরকারের প্রচেষ্টা বৃথা

লেখক: মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও থেকে..
প্রকাশ: ২ years ago

ঠাকুরগাঁওয়ে ছোট বড় সব মিলিয়ে রয়েছে ১১ টা নদী। নদীগুলোর নাব্যতা না থাকায় সরকারিভাবে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে শুরু করা হয়েছে নদী খনন কাজ। নদীর নাব্যতা ফেরাতে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও নদীর তীরে জেগে উঠা চর দখল করে চলছে অবৈধ ধান চাষ।

ঠাকুরগাঁও শহরের উপর দিয়ে বয়ে গেছে টাঙ্গন ও শুকনদী। সম্প্রতি এই দুই নদী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে নদী দখল করে সেখানে করা হয়েছে ধান চাষ। টাঙ্গন ও শুকনদীতে জেগে উঠা ছোট ছোট চরে পাশ থেকে মাটি এনে ভরাট করে চলছে নামে-বেনামে চর দখল আর ধান চাষ।

নদী ২টি ঠাকুরগাঁও জেলার অন্যতম প্রধান নদী। একসময় ব্যবসা-বাণিজ্যে যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত হতো এ নদী। এর কোল ঘেষে গড়ে ওঠে ঠাকুরগাঁও শহর। নদীর বুকে কিছু নামধারী কৃষক এখন ধান চাষ শুরু করেছে। অনেকে অন্য জায়গা থেকে মাটি নিয়ে এসে ধানের বীজতলা তৈরি করছে। নদী সংকুচিত হওয়ায় ও নাব্যতা না থাকায় এখন নদীতে আর মাছ পায় না জেলেরা। তাই জেলেরা জীবিকার তাগিদে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।

শহরের খালপাড়া গ্রামের প্রবীর দাস বলেন, একসময় মাছ শিকার আমার পেশা ছিল। নদী ভরাট হয়ে এখন আর মাছ নেই নদীতে। পানি নাই, মাছও নাই। নদী ভরাট করে অনেকে ধান চাষ করছে। ভরাট নদীতে পানি না থাকলে মাছ থাকবে কই থেকে। তাই বাধ্য হয়ে এখন রিক্সা চালায় জীবিকা নির্বাহ করছি।

বরুনাগাঁও এলাকার বজলু হক বলেন, নদীতে মাছ ধরে আমাদের সংসার চলে, কিন্তু কয়েক বছর ধরে নদীতে কোন মাছ পাওয়া যায় না। ২০১৯ সাল থেকে নদী খনন করলেও ৬ মাস যেতে না যেতে আবারও ভরাট হয়ে গেছে নদী। তাই মাছ ধরা বাদ দিয়ে মানুষের বাসায় দিনমজুরের কাজ করছি।

নারগুন কহরপাড়া গ্রামের কৃষক কামাল হোসেন বলেন, নদীতে একসময় অনেক পানি ছিল, সেই পানি কৃষি কাজে ব্যবহার হতো। এখন নদীতে এক হাটুর কম পানি থাকে তাই নদীর পানি আর কৃষি কাজে ব্যবহার করতে পারি না। যদি নদীটা আবারও খনন করা হয় তাহলে কৃষকরা লাভবান হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নদী দখলে নিয়ে ধান চাষ করা এক কৃষক বলেন, নিজস্ব জায়গা-জমি নেই, তাই নদীতে বাধ দিয়ে কিছু ধান চাষ করেছি। এই আবাদ থেকে আমার পরিবারের দুই থেকে তিন মাসের চালের যোগান হবে। এটা যদি অপরাধ হয় তাহলে এরপর থেকে আর করবো না।

ঠাকুরগাঁও প্রেস ক্লাবের সভাপতি মনসুর আলী বলেন, ড্রেজিং করলে নদী তার নাব্যতা ফিরে পাবে, অপরদিকে কৃষকরা উপকৃত হবে। সরকারের কাছে অবিলম্বে ভরাট নদীগুলো খননের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানাই।

ঠাকুরগাঁও সু-শাসনের জন্য নাগরিকের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, অচিরেই এই নদীগুলো আবার খনন করে নদীকে তার পূর্বের প্রমত্তা ফিরিয়ে দেওয়া হক। নদী দখল ও ভরাট করে কেউ যাতে চাষাবাদ করতে না পারে সে বিষয়ে সরকারিভাবে নজরদারী বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।

ঠাকুরগাঁও পৌর মেয়র আঞ্জমান আরা বেগম বন্যা বলেন, ঠাকুরগাঁও শহরের কোল ঘেষে টাঙ্গন ও শুননদী ছোট বেলায় দেখেছি নদীগুলো অনেক গভীর ছিল। টাঙ্গন নদী খনন করা হলেও আবারও ভরাট হয়ে গেছে। নদীটি পুনঃখনন না করায় বর্তমানে অবৈধভাবে দখল করে ধান চাষ করছে স্থানীয় লোকজন। অবৈধ দখলের কারণে ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে নদী। অচিরেই অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে নদী দখলমুক্ত করা হবে।

ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে আমরা দেখেছি ঠাকুরগাঁও শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া টাঙ্গন ও শুক নদী ভরাট করে ধান রোপন করছে কিছু স্থানীয় মানুষ। সেই জায়গাগুলো দ্রুত দখল মুক্ত করা হবে। এছাড়াও পূণরায় নদী খনন করে নদীর নাব্যতা ফেরাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

বিডি/শেখ

  • নদী দখল করে চলছে ধান চাষ
  •    

    কপি করলে খবর আছে