পঞ্চগড়ে গতকাল শুক্রবার পুলিশের সঙ্গে সম্মিলিত খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদের কর্মী ও সমর্থকদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর মিছিল বের করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে পুলিশ, সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।
পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা জানান, সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন, আরিফুর রহমান (২৮) ও জাহিদ হাসান (২২)। আরিফুর পঞ্চগড় শহরের মসজিদপাড়া এলাকার ফরমান আলীর ছেলে। জাহিদের বাড়ি নাটোরের বনপাড়ায়।
শুক্রবার দুপুরে আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক রহিমুল ইসলাম বলেন, আরিফুলের মাথায় গুলি লেগেছিল। এতে তাঁর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। পরে তাঁকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পথেই তিনি মারা যান।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার জেলার আহম্মদনগর এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের তিন দিনব্যাপী বার্ষিক সালানা জলসার আয়োজন করা হয়। জলসা বন্ধ ও আহমদিয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে সম্মিলিত খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদের ডাকে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের কর্মী ও সমর্থকরা জুমার নামাজের পর খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পরে তারা একত্র হয়ে মিছিল নিয়ে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে এলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশও টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
দুপুরের পর থেকে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ চলে। এ ছাড়া পুলিশ ও বিজিবির গাড়ি ভাঙচুরসহ ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা। গতকাল শুক্রবার রাত পর্যন্ত সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিক, বিক্ষোভকারী ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে।
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কয়েকজন জানায়, সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ পঞ্চগড় বাজারে তাদের চারটি দোকানের মালপত্র বের করে পুড়িয়ে দেয় ও অন্তত ২০টি বাড়িতে আগুন দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়। এর পরও সংঘর্ষ চলতে থাকে। বিক্ষোভকারীরা শহরের অলিগলিতে লুকিয়ে থেকে বেশ কয়েকবার অতর্কিত হামলা চালায়।
এদিকে কোনো বিক্ষোভ কর্মসূচি করা হয়নি দাবি করেন নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কারি মো. আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, গতকাল আমাদের কোনো কর্মসূচি ছিল না। কারা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে আমাদের জানা নেই।
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মাসিক পত্রিকা আহ্বানের সম্পাদক মাহমুদ আহমদ সুমন বলেন, উগ্র ধর্মাবলম্বীরা আমাদের প্রতিটি বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। আমাদের ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয়েছে। একজন মারাও গেছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকালে জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে একই দাবিতে বিক্ষোভকারীরা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। বিকেল ৪টায় পুলিশের আশ্বাসে তারা কর্মসূচি তুলে নেয়। তবে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কয়েকজন তরুণ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কয়েকটি পরিবারের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে এবং আগুন দেয়।
বিডি/ডেস্ক
কপি করলে খবর আছে