পারিবারিক দ্বন্দের জের ধরে এক অটো চালককে বাড়ী থেকে ডেকে নিয়ে চুরির মালামাল হাতে ধরিয়ে দিয়ে পুলিশে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কোন ধরণের অপরাধ না করেও শুধুমাত্র ব্যক্তি দ্বন্দের শিকার হয়ে ২৯ দিন জেলও খেটেছেন ওই ভুক্তভোগি। এদিকে বিনা দোষে নিরীহ মানুষকে জেল খাটানো ও মারধর করায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে এলাকাবাসি। এ অন্যায়ের ন্যায্য বিচার না পেলে যে কোন সময় তারা মানববন্ধন সহ অভিযুক্ত ব্যক্তির বাড়ী ঘেরাও কর্মসুচি পালন করার হুশিয়ারী দিয়েছেন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া গোপালপুর শিমুলডাঙ্গী গ্রামে।
ভূক্তভোগি অটোচালকের নাম বেলাল হোসেন। তিনি গড়েয়া গোপালপুর শিমুলডাঙ্গী গ্রামের আশ্রায়ণের বাসিন্দা ও পেশায় একজন অটোচালক।
আশ্রায়ণের বাসিন্দা সহ স্থানীয়দের অভিযোগ ওই এলাকার ছাত্তার আলীর মেয়ে সাহিদার সঙ্গে অটোচালক বেলালের ছেলে মানিকের বিয়ে দেন অভিযুক্ত আব্দুস ছাত্তার। মেয়ের মাথার চুল না থাকায়, পূর্বের বিয়ে থাকায় এবং মেয়ের বয়স ছেলের বয়সের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় অটোচালক বেলালের পরিবার এ বিয়ে মেনে নেনেনি। এ নিয়ে উভয় পরিবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন এবং বর্তমানে মামলা নিস্পত্তির পথে। এদিকে মামলায় পরাজয় নিশ্চিত জেনে আব্দুস ছাত্তার বেলালের পরিবারকে হেনস্থা করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন। এরই অংশ হিসেবে তার আত্মীয়-স্বজন (মিজানুর রহমান ও ইদ্রিস আলী ইদু)দের সহযোগিতায় বেলালের পরিবারের বদনাম করতে চুরি নাটক সাজান এবং ষড়যন্ত্রমুলকভাবে বেলালকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে চুরির মালামাল হাতে ধরিয়ে দিয়ে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পরে ছাত্তারের ভগ্নিপতি মিজানুর রহমান বাদী হয়ে বেলাল ও তার ছেলে স্বপনের বিরুদ্ধে ব্যাটারী ও বাইসাইকেল চুরির মামলা দায়ের করেন।
এদিকে প্রভাবশালী আব্দুস ছাত্তার কর্তৃক পিতাকে প্রকাশ্য মারধরের ঘটনায় ও বাবা-ছেলের নামে মামলা দায়ের করায় প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ভুক্তভোগি বেলালের ছেলে স্বপন। তার কোন হদিস পাচ্ছে না তার পরিবার।
ভুক্তভোগি বেলাল জানান, ঘটনার দিন আমাকে কার্তিকতলার ব্যাটারী দোকানদার সাদ্দাম হোসেন আমাকে তার দোকানে জরুরীভাবে দেখা করতে বলেন। আমি প্রতিবেশী হামিদুল ইসলামের সাথে কার্তিকতলা বাজারে যাই। সেখানে আগে থেকে মিজানুর, ইদ্রিস আলী ইদু ও শুখানপুকুরী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এসময় দোকানদার সাদ্দাম হোসেন জানান, আপনার ছেলে স্বপন সাইকেলে করে আমার দোকানে এসে বিক্রি করার জন্য পুরাতন একটি ব্যাটারী আমাকে দিয়েছে, আমি ভোটার আইডি চাইলে সে ব্যাটারীটি অন্যজনের, তার কাছ থেকে এনে দেওয়ার কথা বলে চলে গেলেও আর আসেনি। ব্যাটারীর মালিক মিজানুর ও সাইকেলের মালিক ইদ্রিস আলী এখানে আছেন-আপনারা এটা নিয়ে যান। এসময় মিজানুর ও ইদ্রিস মালিক হয়েও ব্যাটারী ও সাইকেল নিতে অস্বীকার করলে এক প্রকার জোর করে আমার কাছে তুলে দেয়। এসময় উপস্থিত ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন বলেন, সমস্য নেই কাল সকালে দুই পক্ষের লোকজন মিলে বসে বিষয়টি সমাধান করা হবে।
এদিকে ব্যাটারী ও সাইকেল ভ্যানে করে নিয়ে আসার পথে ছাত্তার পথিমধ্যে আমাকে দেখামাত্রই জোরে জোরে চিৎকার করে বলতে থাকেন ‘বেটায় মাল চুরি করে দোকানে দিছে, বাপে টাকা আনতে গিয়ে ধরা খাইছে-বলেই পায়ে বাঁশ দিয়ে বেধরক মারতে থাকেন। এসময় ৯৯৯-এ খবর দিলে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এসময় ছাত্তার তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে আমাকে চোর সাব্যস্ত করে মালামাল সহ হাতে-নাতে পুলিশের হাতে তুলে দেন আর তার আত্মীয় মিজানুরকে বাদী করে পরদিন অর্থাৎ ৬ জুলাই আমাকে ও আমার ছেলে স্বপনের নামে চুরির মামলা দায়ের করেন। আমি এ সাজানো মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার সহ এ অন্যায়ের প্রকৃত বিচার চাই।
বেলালের স্ত্রী মোছা. আবেজা জানান, আমার স্বামী অপরাধ না করেও ছাত্তারের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বিনাদোষে ২৯ দিন জেল খেটেছেন। আমার ছেলে বর্তমানে নিরুদ্দেশ, তার কোন খোঁজ-খবর পাচ্ছি না। এলাকায় আমাদের মান-সম্মান সব শেষ হয়ে গেছে, আমার পরিবারের প্রতি এ অন্যায়-অবিচারের ন্যায্য বিচার চাই এবংএ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আব্দুস ছাত্তার এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি হিংসার বশবর্তী হয়ে বেলালের পরিবারের ক্ষতিসাধন করার কথা অস্বীকার করলেও সেদিন রাতে বেলালকে মারধরের কথা স্বীকার করেছেন।
ব্যাটারী ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, স্বপনের পিতা বেলালকে আমি ডেকেছিলাম তার ছেলের বিষয়টি জানানোর জন্য। তিনি এ ঘটনার সাথে জড়িত নন, কিংবা চুরি মালামাল বিক্রির টাকা নিতেও আসেননি।কিন্তু একটি মহল পরিকল্পিতভাবে বিষয়টি ভিন্নখাতে নিতে এধরণের কথা ছড়িয়ে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
চুরির বিষয়ে মামলার বাদী ও অভিযুক্ত আব্দুস ছাত্তার এর ভগ্নিপতি মিজানুর রহমান জানান, আমার ব্যাটারী চুরি হয়েছিলো-এজন্য এলাকার দোকানদার বিষয়টি জানিয়ে রেখেছিলাম। পরে ব্যটারী উদ্ধারের বিষয়টি জানতে পেরে সাদ্দামের দোকানে গিয়েছিলাম। এসময় স্থানীয় ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন এর সামনে আমাকে ব্যাটারীটি দেওয়া হলে আমি সেটি এভাবে নিতে চাইনি, পরে তার পরামর্শে পরদিন সকালে উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মিমাংসা করার কথা হলে ব্যাটারী ও সাইকেল সহ আমরা সকলে এলাকায় ফিরছিলাম। কিন্তু পথিমধ্যে বেলালকে মারধর করা হলে পরিস্থিতি ভিন্নদিকে চলে যায় এবং বেলালকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে হয়। তবে বেলাল পরিস্থিতির শিকার বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে সদর থানার এসআই হিরণময় চন্দ্র রায় এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চুরির মালামাল সহ হাতেনাতে একজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে এবং মিজানুর রহমান নামে একজন বাদী হযে চুরির মামলা দায়ের করলে আদালতের মাধ্যমে আসামীকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। আটক ব্যক্তি চুরির সাথে জড়িত না থাকলেও তার ছেলে এলাকায় ছোটেখাটো চুরির সাথে জড়িত আছে বলে তদন্তে তিনি জানতে পারেন বলে জানান।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা ও আশ্রায়ণের বাসিন্দা চায়না বেগম, রফিজা বেগম,হাফিজুল ইসলাম, ফাতেমা বেগম, স্থানীয় যুবলীগ নেতা বিকাশ চন্দ্র বলেন, পারিবারিক দ্বন্দের কারণে বেলালের পরিবারকে হেনস্থা করতে আব্দুস ছাত্তার পরিকল্পিতভাবে তার লোকজন দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। কেননা যে মানুষের নামে এলাকায় বিন্দুমাত্র অভিযোগ নেই সেই মানুষকে বিনা দোষে অপরাধী বানিয়ে জেল খাটানো হয়েছে। আমরা এ জঘন্য কাজের তীব্র নিন্দা জানাই ও এ ঘটনার ন্যায্য বিচার চাই-অন্যথায় আমরা মানববন্ধন সহ অপরাধীর বাড়ী ঘেড়াও কর্মসুচি পালন করতে বাধ্য হবো।
ডেস্ক/বিডি
কপি করলে খবর আছে