ঠাকুরগাঁও শহরের আশ্রমপাড়া শিশুপার্ক মোড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা (যুদ্ধাহত) মো: আব্দুর রশিদ এর নিকট থেকে তাঁর নামীয় মাত্র ০.০৫০ একর খাস খতিয়ানভূক্ত জমি হস্তান্তর করে নিজ নামে রেকর্ডভূক্ত করে সেখানে একটি ছোট্ট মুদি দোকান দিয়ে সংসার পরিচালনা করতেন মো: মাহমুদ আলম বাবুল। লিজকৃত জমির নিয়মিত খাজনাও পরিশোধ করতেন তিনি। মাঝে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। চোখ পড়ে সেই জায়গার উপর। অপরদিকে মাহমুদ আলমের সন্তানেরা সক্রিয়ভাবে আ’লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় এ ক্ষোভ যেন আরও বিস্ফোরিত হয়ে উঠে।
হিংসার বশবর্তী হয়ে তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যান ডালিম চৌধুরী হঠাৎ করে ২০০৩ সালে জমিটির মালিকানা অন্যজন দাবি করে শুধুমাত্র রাজনৈতিক চরিতার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে জোড়পূর্বক সেই ঘুন্টি দোকানটি উচ্ছেদ করেন।
এদিকে সন্তানেরা বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় জর্জরিত হয়ে পলাতক, অপরদিকে শারিরীকভাবে অক্ষম মাহমুদ আলম এর প্রতিবাদ জানিয়েও কোন কাজ হয়নি। তবে পড়ে থাকে সেই জমি।
এদিকে পেড়িয়ে যায় ২০টি বছর, মারা যান মাহমুদ আলম বাবুল । হঠাৎ ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে খাজনা পরিশোধের একটি সরকারি চিঠি আসে মাহমুদ আলমের নামে। এরপর সন্তানেরা জানতে পারেন তার পিতার সেই সম্পদ এখনো কেউ নিতে পারেনি। এরপর তারা খাজনা পরিশোধের জন্য জীবিত মা সহ সন্তানদের নামে ওই সম্পত্তিটুকু হস্তান্তরের জন্য আবেদন করেন এবং জমিটিতে স্থাপনা নির্মাণ করেন।
মাহমুদ আলমের ছেলে আসাদুজ্জামান পুলক জানান, আমাদের গাড়ীর ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে বাবা খুব কষ্ট করে এখানে দোকান পরিচালনা করে সংসার চালাতেন। সেই সময় আমি সহ আমার ভাইয়েরা সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আমাদের নামে বেশকটি রাজনৈতিক মামলা দায়ের করে, ফলে আমাদের পালিয়ে বেড়াতে হয়। এ সুযোগে তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যান ডালিম চৌধুরী বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের ইন্ধনে জোড়পূর্বক আমার বাবার দোকানটি গুড়িয়ে দেয়। বাবা এর প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয়নি।
এরপর বাবা মারা যায়, আমরা ধরেই নিয়েছিরাম ওই সম্পত্তি আর আমাদের নেই। কিন্তু ২০২২ সালে যখন আমরা খাজনা পরিশোধের তাগিদ দেওয়া একটি চিঠি পাই তখন বুঝতে পারি বাবার দোকান ঘর গুড়িয়ে দিলেও তা নিজেদের করতে পারেনি তারা। এরপর আমরা আমার মা সহ অন্যান্য সন্তানেরা মালিকানা পরিবর্তনের আবেদন করি এবং সেখানে ঘর নির্মাণ করি। আশা করি তা দ্রুত সময়ের মধ্যে হয়ে যাবে।
এদিকে বাবার রেখে যাওয়া স্মৃতিটুকু উদ্ধার করতে পারায় আনন্দিত এলাকাবাসিও। স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা জজ কোর্টের ভেন্ডার ব্যবসায়ী আখতার হোসেন বলেন, বাবুল ভাইয়ের সন্তানেরা এতোদিন পর হলেও সেখানে দোকান ঘর করতে পেরেছে এজন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই খুশী। তাদের বাবা সেখানে খুব কষ্ট করেছে।
আরেক প্রতিবেশী ইতু মাস্টার জানান, জমিটি উদ্ধার করতে পারায় আমরা এলাকাবাসি অনেক আনন্দিত। শিশুপার্ক মোড়ের সফি মিস্ত্রি জানান, দীর্ঘদিন ধরে জায়গাটি ফাঁকা পড়েছিলো। আমরা ধরে নিয়েছিলাম সেটা বুঝি বিএনপির কারও নামে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু যখন দেখি বাবুল ভাইয়ের ছেলে পুলকদের কাছে খাজনা পরিশোধের তাগিদপত্র আসছে, তখন মনে শান্তি পাইছি। ওদের বাবা বেঁচে থাকতে খুব কষ্ট করছে এই জমির জন্য। আমরা এলাকাবাসি আজ আনন্দিত, তারা তাদের পিতার সম্পদ ফিরে পাওয়ায়।
ডেস্ক/বিডি
কপি করলে খবর আছে