ছিতুয়া আমার বন্ধু !

লেখক: বাংলা ২৪ ভয়েস ডেস্ক
প্রকাশ: ২ years ago

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান সম্প্রতি ফেসবুকে তুলে ধরেছেন তাঁর বাল্যবন্ধু রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচ্ছন্নতাকর্মী (সুইপার) থেকে সম্প্রতি অবসর নেওয়া ছিতুয়ার সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের নানা স্মৃতি। অনলাইনে তাঁর ‘সুইপার আর মন্ত্রীর বন্ধুত্বের কাব্যগাথা’ শিরোনামে স্মৃতিকথাটি পোস্ট করা মাত্রই নেটিজেনদের নজর কাড়ে। এতে অনেকেই তাঁদের মধ্যকার বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার তারিফ করছেন।

সুইপার আর মন্ত্রীর বন্ধুত্বের কাব্যগাথা শিরোনামে ডা. মো. এনামুর রহমান লিখেছেন, ‘পতাকাবাহী গাড়ি।

পুলিশ প্রটোকল। বাড়তি লোকজনের ভিড়। এসব দেখে কিছুটা হতভম্ব ছিতুয়া। আমাদের সেই বন্ধুত্বের আবেগ আর আমার দুরন্তপনার দিনগুলো তখন অতীতের স্মৃতির ঝাঁপি খুলে জ্বলজ্বলে তারা হয়ে উপস্থিত আমার চোখের সামনে’
তিনি লিখেছেন, ‘কিন্তু ছিতুয়া প্রচণ্ড আড়ষ্ট। নিজেকে আড়াল করার কি ব্যর্থ চেষ্টা! আমি বুঝতে পারছিলাম, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে চারপাশের প্রটোকলের আবহ ছিতুয়া আর আমার সম্পর্কের মধ্যে এক অদৃশ্য দেয়াল টেনে দিচ্ছে।

জনারণ্যে ‘এই ছিতুয়া’ বলে ডাকতেই ফিরে তাকাল সে। পড়ন্ত বয়সেও যেন সেই হারানো যৌবনের চকচকে চোখে মৃদু হাসিতে তাকাল আমার দিকে। দৃষ্টি বিনিময় হতেই বন্ধুকে বুকে টেনে নিয়ে বুক ফুলিয়ে গর্বের সঙ্গে বললাম, এই ছিতুয়াই আমার স্কুলের বন্ধু। ছিতুয়ার তখন ছলছলে চোখ। আমারও গোপন অশ্রুবিন্দুগুলো তখন স্মৃতির মণিমুক্তা হয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে দুই নয়ন।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচ্ছন্নতাকর্মী (সুইপার) থেকে সম্প্রতি অবসর নিয়েছে ছিতুয়া। ছিতুয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে ধারাবাহিক পেশাগত সম্পর্ক ধরে রেখেছে বৌদি গীতা রানী। সে-ও এখন সুইপার পদে কর্মরত।

তো আসছি ছিতুয়ার প্রসঙ্গে। আমার বাবা মরহুম আক্তারুজ্জামান খান ছিলেন এই অফিসেরই উচ্চমান সহকারী (ইউডি অ্যাসিস্টেন্ট)। আর ছিতুয়ার মা (আমাদের প্রিয় মাসি মা) চানিয়া রানী ছিলেন সুইপার।

তখন ছিলো স্বর্ণালীযুগ। আমরা যে মূল্যবোধে বেড়ে উঠছিলাম, সেখানে জাতপাতের কোনো বালাই ছিল না। আরো অন্যান্য বন্ধুদের মতো ছিতুয়া-ও ছিল আমার দুরন্ত শৈশব আর কৈশোরের অসাধারণ এক বন্ধু। রংপুরের রবার্টসনগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই ছিল ছিতুযা। তারপর পড়াশোনায় ইস্তফা দিলেও আমাদের বন্ধুত্বে ভাটা পড়েনি কখনো।

আহারে জীবন। আমার সোনালি অতীত। সোনালি কৈশোরের কত শত স্মৃতিমাখা রংপুর। আজ ছিতুয়া ঝাপসা করে দিচ্ছে আমার চোখ দুটো।

ছিতুয়া আর আমার দুরন্তপনায় রীতিমতো অস্থির থাকত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলোনি। আমি দুঃসাহসী ‘গাছো’ ছিলাম। যে কোনো গাছে কাঠবিড়ালের মতো তরতর উঠে পড়তে আমার আর ছিতুয়ার জুড়ি মেলা ভার। তো কলোনির আঙিনায় সারি সারি নারিকেল গাছের নারিকেল পরিপক্ক হবার আগেই তা আমাদের কারণে সাবাড় হয়ে যেত। তেমনি আম-কাঁঠাল-ও।

জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে কৈশোরের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিগুলো একদিকে যেমন আনন্দের অন্যদিকে অনেক কষ্টের।
সেই আনন্দ আর কষ্টের মিশেলে ভিন্ন‌ এক অনুভূতি আজ উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছে আমার বন্ধু ছিতুয়া।

সরকারী চাকরি কনটিনিউ করলে বেশ কয়েক বছর আগে আমার নিজেরও অবসর নিতে হতো। আমার বন্ধুদের অনেকেই দেশবরেণ্য চিকিৎসক, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট জেনারেল, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিবসহ আরো কত কি!
ছিতুয়া অবশ্যই তাদের তুলনায় কম কিছু নয়।

বন্ধু মানে আস্থা, নির্ভরতা। বন্ধু মানে ভালোবাসা, যেখানে থাকে না কোনো স্বার্থ। গাড়ির পতাকা, প্রটোকল, পদ পদবি সামাজিক অবস্থান এগুলো সব কিছুই সাময়িক। কিন্তু বন্ধুত্বের বন্ধন চিরদিনের।

‘ছিতুয়া বন্ধু আমার। তোর জন্য ভালোবাসা। ‘

(দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমানের ফেসবুক ওয়াল থেকে)

ডেস্ক/বিডি

  • সুইপার আর মন্ত্রীর বন্ধুত্ব
  •    

    কপি করলে খবর আছে