ছেলেরা থাকেন পাকা ঘরে; ঝুপড়ি ঘরেও ঠাঁই হলো না বৃদ্ধা মায়ের!

লেখক: ময়নুল হক, নীলফামারী থেকে
প্রকাশ: ১২ মাস আগে

পাঁকা ঘরে থাকেন ছেলেরা, আর মা থাকতেন ঝুপড়ি ঘরে। ছেলেরা দেখাশোনা না করায় মাকে ভিক্ষাও করতে হতো। কিন্তু ছেলেরা শেষমেশ মাকে সেই ঝুপড়ি ঘরেও থাকতে দেয়নি। ঝুপড়ি ঘর ভেঙে মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে সেই মা এখন রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর তিতপাড়া গ্রামে। বৃদ্ধা ওই মায়ের নাম মেহেরবানু (৭০)। তিনি একই গ্রামের মৃত পামর উদ্দিনের স্ত্রী। স্বামী মারা গেছে প্রায় ৯ বছর আগে। বৃদ্ধার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। স্বামী মারা যাওয়ার পর তাঁদের বুকে পিঠে করে বড় করেছেন। আশা ছিল, শেষ বয়সে তাঁদের সঙ্গেই সুখের দিন পার করবেন। কিন্তু ছেলেরা বড় হয়ে নিজ নিজ সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মায়ের কথা মনে থাকে না আর তাদের। মায়ের ঠাঁই হয় ভিটের এক কোনায় সরকারি অনুদানে পাওয়া ঢেউটিনের খুপরি ঘরে। দুই ছেলে ভরণপোষণের দায়িত্ব না নেওয়ায় ভিক্ষা করে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতো তাঁর।

সম্প্রতি তুচ্ছ ঘটনায় মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে বাড়ি থেকে বের করে দেন বড় ছেলে মহসিন আলী ও ছেলের বউ আলেয়া। থাকার জায়গাটিও ভেঙে দেন তাঁরা। বর্তমানে বাড়ির সামনেই রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই নিয়েছেন এই মা।

এ বিষয়ে মেহেরবানু বলেন, সম্প্রতি বড় ছেলে মহসিন আলীর সঙ্গে ছোট ছেলে ফজিবর রহমানের পারিবারিক কলহের জেরে মারামারি হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় সালিসে বড় ছেলে আমাকে ছোট ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দিতে বলে। এতে রাজি না হওয়ায় আমাকে টেনে-হিঁচড়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে বড় ছেলে ও বউমা। এ সময় আমার ঘর ভেঙে দিয়ে জিনিসপত্র বাইরে ছুড়ে ফেলেছে।

আরও পড়ুন : চাঁদ রাতে সাবেক স্ত্রীর বাবার বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লেন যুবক!

মেহেরবানু আরও বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর আমার থাকা খাওয়া নিয়ে ছেলের বউরা প্রায়ই ঝগড়া করত। এর আগেও দুই ছেলে ও ছেলের বউ আমাকে বেশ কয়েকবার নির্যাতন করেছে। বাধ্য হয়ে আমি অন্যের বাড়িতে কাজও করেছি। ভিক্ষাবৃত্তি করে যা আয় হতো তাই দিয়ে পেট চালাতাম। তারপরও ছেলেরা ভালো থাকুক, সুখে থাকুক।

কিন্তু ছেলেদের এমন অমানবিক আচরণে মেহেরবানু কাঁদো গলায় অভিমান করে বলেন, অনেক কষ্টে ছেলেদেরকে মানুষ করেছি। শেষ বয়সে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকার ইচ্ছা ছিল। সেসব ইচ্ছে আর নাই। মৃত্যু হলেও আর ছেলেদের কাছে ফিরতে চাই না।

স্থানীয়রা জানান, এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় মহসিন ও তার স্ত্রী তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছে। ঘর থেকে বের করে দেওয়ার পর ২০ থেকে ২৫ দিন ধরে বৃদ্ধা মা খোলা আকাশের নিচে ঝোপের পাশে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহসিন আলীর স্ত্রী আলেয়া বেগম বলেন, শাশুড়ির আচরণ খারাপ। তাই তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ছোট ছেলে ফজিবর রহমান বলেন, আমার স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় মা বড় ভাইয়ের ভিটায় থাকে। তারাই মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা ছিল না। খোঁজখবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ডেস্ক/বিডি

  • ঝুপড়ি ঘরেও ঠাঁই হলো না বৃদ্ধা মায়ের!
  •  

    কপি করলে খবর আছে