ট্রলারে ভেসে আসা ১০ মরদেহের পরিচয় সনাক্ত; রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ!

লেখক: বাংলা ২৪ ভয়েস ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ মাস আগে

পরিচয় জানা গেছে কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক উপকূলে ভেসে আসা ট্রলার থেকে উদ্ধার অর্ধগলিত ১০ মরদেহের। নিহত সবাই মহেশখালী ও চকরিয়ার বাসিন্দা। ডুবে যাওয়া ট্রলারের মালিক মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের বাসিন্দা সামশুল আলম। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি একজন।

পুলিশের ভাষ্য, পূর্বশত্রুতার জেরে গভীর সাগরে পরিকল্পিতভাবে ১০ জেলেকে হত্যা করা হতে পারে। অথবা জলদস্যুরা গভীর সাগরে ট্রলারের মাছ লুট করে জেলেদের বরফ রাখার কুটিরে (কক্ষে) আটকে দেয়।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা যায়, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়ার রফিক মিয়ার ছেলে সামশুল আলম (২৩), শাপলাপুর ইউনিয়নের মিটাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৮), জাফর আলমের ছেলে সওকত উল্লাহ (১৮), মুসা আলীর ছেলে ওসমাণ গনি (১৭), সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ (২৩), মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ (১৪), মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে নুরুল কবির (২৮), চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৪), শাহ আলমের ছেলে মোহাম্মদ শাহজাহান (৩৫) ও চকরিয়া পৌরসভার চিরিঙ্গা এলাকার জসিম উদ্দীনের ছেলে তারেক জিয়া (২৫)।

ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত দাবি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ট্রলারের বরফ রাখার কক্ষ থেকে ১০ জেলের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনের হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। কয়েকজনের শরীরে জাল প্যাঁচানো ছিল। একটি লাশের গলা থেকে মাথা ছিল বিচ্ছিন্ন। আরেকটি লাশের হাত বিচ্ছিন্ন পাওয়া গেছে। লাশগুলো ট্রলারের যে কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেই কক্ষের ঢাকনাও পেরেক দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া ট্রলারের জাল ও ইঞ্জিন রয়ে গেছে। এ কারণে সন্দেহ হচ্ছে, হত্যাকাণ্ডটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গভীর সাগরে ডুবিয়ে দেওয়া ট্রলারটি আরেকটি মাছ ধরার ট্রলারের জালে আটকা পড়েছিল। ওই ট্রলারের জেলেরা রশি দিয়ে ডুবন্ত ট্রলারটি টেনে মহেশখালীর সোনাদিয়া চ্যানেলে নিয়ে আসেন। রবিবার বেলা দেড়টার দিকে ডুবন্ত ট্রলারটি কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক চ্যানেলে পৌঁছালে মৃত ব্যক্তিদের হাত-পা ভেসে উঠতে দেখা যায়। তাতে ভয় পেয়ে যান টেনে আনা ট্রলারের জেলেরা। এ সময় ডুবন্ত ট্রলারটি রেখে পালিয়ে যান তারা। পরে লাশবোঝাই ডুবন্ত ট্রলার ভেসে আসার খবর জানালে বেলা দুইটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা বেলা তিনটা পর্যন্ত ট্রলার থেকে ১০ জনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেন। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন : ফুলবাড়ীতে লোকালয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মুুখপোড়া হনুমান;পিছু নিয়েছে কৌতূহলীরা!

ঘটনার পরপরই রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামে পিবিআইয়ের একটি দল। পিবিআই প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত আইজি বনজ কুমার মজুমদার ঘটনাটি পর্যবেক্ষক করছেন। সন্ধ্যা নাগাদ পিবিআই দল নিহত ১০ জেলের প্রাথমিক পরিচয় শনাক্ত করেছে।

বনজ কুমার মজুমদার রাতে বলেন, নিহত ১০ জেলের প্রাথমিক পরিচয় শনাক্ত করেছে পিবিআই। ১০ জেলের মধ্যে ৬ জন মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি, একজনের বাড়ি একই উপজেলার কালারমারছড়া গ্রামে এবং অপর তিনজনের চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী গ্রামে। নিহত সবাই ৭ এপ্রিল একটি মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে সাগরে নেমেছিলেন। সেখানে জেলেদের বরফ রাখার কক্ষে আটকে রেখে ট্রলারটি ডুবি দেওয়া হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।

কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা খান খলিলুর রহমান বলেন, ডুবন্ত ট্রলার থেকে উদ্ধার করা লাশগুলোর অবস্থা দেখে এটি স্বাভাবিক দুর্ঘটনা বলে মনে হচ্ছে না। লাশগুলো জাল প্যাঁচানো ও দড়ি দিয়ে হাত-পা বাঁধা ছিল। উদ্ধার করা ট্রলারটি শহরের উত্তর কুতুবদিয়া পাড়ার উপকূলে পড়ে আছে। ভাটার সময় ট্রলারটি পুরোপুরি ভেসে ওঠে।

ট্রলারটি বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম।

ডেস্ক/বিডি

  • ট্রলারে ভেসে আসা
  • ১০ মরদেহের পরিচয় সনাক্ত
  •  

    কপি করলে খবর আছে