ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া থানার এসআইয়ের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

লেখক: কূদরত আলী, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ: ১ বছর আগে

ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া থানায় কর্মরত নারী লোভী এসআই মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে এক নারী।

গতকাল শনিবার (১১মার্চ) বিকেলে রুহিয়া থানা প্রেসক্লাবে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মনোয়ারা বেগম নামে ভুক্তভোগী এক নারী।

মনোয়ারা বেগম জানান, পীরগঞ্জ থানায় কর্মরত থাকা অবস্থায়রত এসআই জাহাঙ্গীর আলমের সাথে তার পরিচয় হয়। জাহাঙ্গীর আলম পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বারো আউলিয়ার গ্রামের রফিজউদ্দীনের ছেলে। তার সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে জাহাঙ্গীর তার ভাড়া বাসাবাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করে এবং বিয়ে সহ শারীরিক মেলামেশার প্রস্তাব দিতে থাকে। কিন্তু তার আগের স্ত্রী সন্তান আছে জানার পর প্রস্তাব প্রত্যাখান করলে একদিন জোর করে ঘরে ঢুকে কাবিন নামায় স্বাক্ষর নিয়ে তার সাথে সংসার করতে বাধ্য করে। এর কিছুদিন যেতে না যেতে তিনি তার ভাড়া বাসায় নিয়মিত মাদক সেবন শুরু করেন। তার কাছ থেকে জোর করে টাকা নেওয়া সহ নানা ভাবে নির্যাতন শুরু করেন।

পুলিশে চাকরির কারণে ভয়ে তিনি সহ স্থানীয়রা এর প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। পরবর্তীতে স্ত্রী হিসেবে তার বাড়িতে সংসার করতে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে তিনি যৌতুক বাবদ আড়াই লক্ষ টাকা ও অন্যান্য আসবাবপত্র কেনার জন্য আরো মোটা অংকের টাকা নেওয়ার পরে তাকে জানান বিয়ের কাবিননামা ভুয়া। তাকে স্ত্রী হিসেবে নয় বরং সাময়িক ব্যবহার করার জন্য এসব নাটক করেছে বলে জানায় এসআই জাহাঙ্গীর। পরে নিরূপায় হয়ে ওই নারী ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। এতেও কোন সুফল না পাওয়ায় গত ২৩ফেব্রুয়ারী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন মনোয়ারা বেগম।

এদিকে মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে। অপরদিকে মামলা হওয়ার পর থেকেই এসআই জাহাঙ্গীরের ভাড়া করা গুন্ডা তাকে নিয়মিত মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকী দিয়ে আসছে। তাকে ফোন করে মেরে ফেলার হুমকিও দিচ্ছেন। মামলার পর থেকে তিনি এখনও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন,মামলা করার পর থেকে তার জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই বলে জানান তিনি।

মনোয়ারা আরও জানান, তিনি জানতে পেরেছেন জাহাঙ্গীর আলম বর্তমানে ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া থানায় কর্মরত রয়েছেন। সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে তিনি ন্যায় বিচার ও মামলার সুষ্ঠু তদন্তের দাবী জানান।

অপরদিকে এক নারী ইউপি সদস্য ও তার স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে কু-প্রস্তাবের অভিযোগে এসআই জাহাঙ্গীর আলমকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গত শুক্রবার (১০মার্চ) রাতে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার রাধানগড় ইউনিয়নের রাধানগড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ওই এসআইয়ের নারী কেলেঙ্কারির ঘটনাটি মুহূর্তের মধ্যে নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা তার কঠোর শাস্তির দাবি করেন।

ভুক্তভোগীর স্বামী জানান, আমার স্ত্রী ইউপি সদস্য হবার সুবাদে রুহিয়া থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে পরিচয় হয়। প্রায় তিনি আমাদের বাড়িতে মাদক নিয়ে আসতেন। এর মাঝে আমার স্ত্রীকে বিভিন্ন আপত্তিকর কথা এবং তার সঙ্গে আপত্তিকর কাজে লিপ্ত হবার জন্য বলতেন। এমনকি আমার দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকেও কয়েকবার খারাপ কাজের প্রস্তাব দেন। আমার মেয়ে ও স্ত্রী রাজী না হওয়ায় জাহাঙ্গীর আরো বেপরোয়া আচরণ করতে শুরু করেন।

তিনি বলেন, আমি প্যারালাইসিসের রোগী। এসআই জাহাঙ্গীর প্রচুর মাদক সেবন করেন। আমাকেও সে মাদক সেবন করতে বাধ্য করতেন। গত শুক্রবার রাত ৮টার দিকে সে আমার বাড়িতে আসে। মাদক সেবন শেষে ফের আমার স্ত্রীকে খারাপ কাজের প্রস্তাব দেয়। এ সময় আমি ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাকে ঘরে আটকে রাখলে স্থানীয়রা জানতে পেরে তাকে গণপিটুনি দেয়। পরে ৯৯৯ নম্বরে কল করলে পুলিশ এসে তাকে আটোয়ারী থানায় নিয়ে যায়।

ওই নারীর স্বামী আরও বলেন, জাহাঙ্গীর অনেক খারাপ লোক। সে এর আগেও অনেক নারীর জীবন নষ্ট করেছে। পুলিশের চাকরি করে বলে ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে চায় না। তার মতো নারী লোভী পুলিশ আমি কখনো দেখিনি।

এ বিষয়ে রাধানগড় ইউপির চেয়ারম্যান আবু জাহেদ বলেন, আমি শুনেছি পুলিশের এক এসআই এর সঙ্গে একটু ঝামেলা হয়েছে। পরে পুলিশ আসলে সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা জানান, এসআই জাহাঙ্গীর আলমের কাছে ওই নারী টাকা ধার নিয়েছিলেন। সেই টাকা আনতে তার বাড়িতে যায় জাহাঙ্গীর। এরপর কি হয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে এ বিষয়ে আটোয়ারী থানায় যোগাযোগ করলে তারা ভালো বলতে পারবে।

এ বিষয়ে জানতে আটোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহেল রানার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বিডি/ডেস্ক

  • রুহিয়া থানার এসআইয়ের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন
  •  

    কপি করলে খবর আছে