ঠাকুরগাঁওয়ে মসজিদ নির্মাণের নামে জমি দখলের অভিযোগ!

লেখক: নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ মাস আগে

পারিবারিক দ্বন্দ নিরসন না করে রাতারাতি মসজিদ নির্মাণ করে জমি জবর দখলের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের পূর্ব পারপুগী নামক এলাকায়। এতে ওই এলাকায় দেখা দিয়েছে চরম বিশৃংখলা। যে কোন সময় উভয় পক্ষের মধ্যে দাঙ্গা-মারামারির আশংকা করছে এলাকাবাসি। 

জানা যায়, ওই এলাকার মৃত-মজিরউদ্দিনের ওয়ারিস তমিজ উদ্দিন ও বজিরউদ্দিনের ২৮ শতক জমি নিয়ে দ্বন্দ দেখা দেয়। দীর্ঘদিন তারা জমিটি লম্বালম্বীভাবে ভোগ দখল করে আসছিলেন। সম্প্রতি গত ৬ এপ্রিল তমিজউদ্দিনের পাঁচ ছেলে শফিকুল, দলিলুর, রফিকুল, পবেদ ও ফজল এবং ৩ বোন তাদের অংশের ৮ শতক জমিতে মসজিদ নির্মাণ করে এবং পুরো জমি ঘেরাবেড়া দিয়ে নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। এতে বজিরউদ্দিনের শরিকদের মধ্যে দেখা দেয় অসন্তোষ। এঘটনায় বজির উদ্দিনের ছেলে সাবেক ইউপি সদস্য রুহুল আমিন, আমিরুল ইসলাম, ইসলামুল এবং মেয়ে সুলতানা, হাসিনা ও দুলালী আদালতের মাধ্যমে ওই জমির উপর ১৪৪ ধারা জারির আবেদন করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ওই জমিতে ১৪৪ জারি করেন। কিন্তু আদালতের সেই আদেশও উপেক্ষা করে সেখানে মাটি ভরাট করে ঘেরাবেড়া দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বজিরউদ্দিনের ছেলে রুহুল আমিন।

রুহুল আমিন জানান, আমাদের সেখানে ২৮ শতক পৈত্রিক সম্পত্তি ছিলো, সেটা আমরা ও আমাদের চাচাতো ভাইয়েরা ১৪ শতক করে লম্বালম্বিভাবে ভোগ দখল করে আসছিলাম। কিন্তু সম্প্রতি সেখানে তারা জমিটি অবৈধভাবে দখলে নিতে রাস্তা সংলগ্ন ৮ শতক জমিতে রাতারাতি মসজিদ নির্মাণ করে এবং পুরো জমিটি দখলে নিয়ে নেয়। আমরা এ ঘটনায় আদালতের স্মরনাপন্ন হই এবং জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এছাড়াও এ বিষয়ে আমরা সুরাহা পেতে জেলা আ.লীগের সভাপতি মুহা. সাদেক কুরাইশীর সাথে দেখা করলে তিনি ১১নং মোহাম্মদপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: সোহাগ হোসেন ও ১০ নং জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও নির্মানাধীন মসজিদ কমিটির সভাপতি এসএম মোস্তাককে বিষয়টি সমাধানের জন্য  দায়িত্ব দেন। পরবর্তীতে রোজার ঈদ চলে আসায় তারা ঈদের পর বসে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন।

রুহুল আমিন আরও বলেন, ঈদ পরবর্তী শালিস বৈঠকের কথা থাকলেও বিরোধীপক্ষরা ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে সেখানে মাটি ভরাট সহ জমিতে ঘেরাবেড়া দেন। ১ম দিকে আমাদের ভাগের ১৪ শতক লম্বালম্বির পরিবর্তে সামনের অংশে মসজিদ নির্মাণ করে পিছনের অংশ আমাদের দিতে চাইলেও এখন তারা পুরো জমি অবৈধভাবে দখলে রেখেছে। আমরা বিষয়টি সমাধানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি এবং এর সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

আরও পড়ুন : ছাত্রদলের নেতা ও বিএনপি-জামাত পন্থিদের নিয়ে কৃষকলীগের কমিটি গঠনের অভিযোগ!

এদিকে তমিজউদ্দিনের ছেলে শফিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমরা মসজিদের নির্মানের নামে কোন জমি জবর দখল করিনি। মূলত; আমাদের পৈতৃক ভিটা ২৮ শতকে আমরা উভয় পক্ষই ১৪ শতক করে ভোগ দখল করে আসছিলাম। সম্প্রতি আমরা ৫ ভাই ও ৩ বোন আমাদের অংশের ৮ শতাংশ জমি মসজিদের নামে লিখে দেই এবং সেটি রাস্তা সংলগ্ন হওয়ায় রুহুল আমিন গংরা আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ তুলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তাই ১৪৪ ধারার জবাব দিয়েছি এবং সামনের তারিখে কোর্টে এর ফয়সালা হবে। পুরো জমি দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সাথে তাদের অন্য জমির মৌখিক অদল-বদল রয়েছে, তাই পুরো জমি আমাদের দখলে রেখেছি।

এ বিষয়ে জানতে জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও  নির্মানাধীন মসজিদ কমিটির সভাপতি এসএম মোস্তাকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এটা তাদের পারিবারিক বিষয়। জমি কে কোন জায়গায় নিবে, সেটা তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ বিষয়ে শালিস বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারণের পরও একটি পক্ষ অনুপস্থিত থাকায় বৈঠক হয়নি। তবে খুব শীঘ্রই উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধান করা হবে।

এ ব্যাপারে জানতে ১১নং মোহাম্মদপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: সোহাগ হোসেন জানান, মসজিদ নির্মানকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের দ্বন্দ নিরসনে জেলা আ.লীগের সভাপতি মহোদয় আমাকে, মোস্তাক চেয়ারম্যানকে, ১০ নং জামালপুর ইউনিয়নআ.লীগের সভাপতি সৈয়দ এমাদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মোনা চৌধূরীকে দায়িত্ব দেন। সেসময় ঈদ ঘনিয়ে আসায় ঈদের পরে বসার সিদ্ধান্ত হয়। তবে এখন পর্যন্ত বসা হয়নি।শালিস বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত উভয় পক্ষকেই জমিতে যেতে নিষেধ করা হয়েছিলো। এখন শুনতেছি একটি পক্ষ ১৪৪ ধারা উপক্ষো করে সেখানে মাটি ভরাটসহ ঘেরাবেড়া দিয়েছে। এটি আসলে ঠিক হয়নি। আমরা দ্রুত উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করবো।

ডেস্ক/বিডি

  • জমি দখল
  • মসজিদ নির্মাণ
  •    

    কপি করলে খবর আছে