শ্রমিক দিবসেও ছুটি নেই টাকার পাহারাদারদের!

লেখক: বাংলা ২৪ ভয়েস ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ মাস আগে

“ছুটি কি জিনিস তা আমরা জানি না বাবা। ঈদেই ছুটি পাইনা আবার শ্রমিক দিবস। আমাগো কোনো ছুটি নাই। তয় বেশি জরুরি হইলে কম্পানিতে বইলা মাঝে মধ্যে ছুটি নেওন যায়। ডাইল ভাত খাইয়া কোন রহম আছি। আমাগো নিয়া কি কারো ভাবার আছে?”

কালের কণ্ঠের এক সাক্ষাৎকারে কথাগুলো বলছিলেন ব্যাংকের এটিএম বুথে দায়িত্বরত ৬৫ বছর বয়সি নিরাপত্তারক্ষী সামসুর রহমান। তিনি ইউসিবি ব্যাংকের দয়াগঞ্জ শাখায় কর্মরত আছেন। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জে।

শামসুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, এক সময় তার স্টেশনারি ব্যবসা ছিল। ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি নিরাপত্তারক্ষীর চাকুরি করছেন। এই পেশায় আছেন তিনি এক যুগের বেশি সময় ধরে। বর্তমানে তিনি নিরাপত্তারক্ষীদের সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সারাদিন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সামসুর রহমানের বেতন সাত হাজার ৭শত টাকা। স্ত্রীকে নিয়ে তিনি ঢাকার কলতাবাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। শ্রমিক দিবসের এই দিনেও তার ছুটি নেই, তবে এ নিয়ে তিনি মোটেও ভাবেন না। কারন অন্যান্য দিবসেও তাদের ছুটি মেলে না।

আরও পড়ুন : মে দিবসে শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি রাখার আশ্বাস দিলেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক

ঈদ, কুরবানি, পুজো কিংবা শ্রমিক দিবস, কখনই তাদের ভাগ্যে ছুটিতো দুরের কথা ডিউটি চলাকালিন সময়ে এক ঘন্টা বিশ্রামও মেলে না। তারা দেশের টাকার পাহারাদার। অন্যের টাকা পাহারা দিয়েই চলে তাদের জীবন সংগ্রাম। সকাল থেকে সন্ধ্যা কিংবা সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত কখনও দাঁড়িয়ে আবার কখনও বসে দায়িত্ব পালন করে থাকেন দেশের ব্যাংক ও ব্যাংকের বুথের (এটিএম বুথ) এই নিরাপত্তারক্ষীরা।

৪৫ বছর বয়সি মো. মনির হোসেন। কখনো তিনি ব্যাংকের এটিএম বুথের এটিএম মেশিনের পাশঘেসে এক কোনে বসে থাকেন, আবার কখনো বুথের বাইরে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার ডাচ বাংলা ব্যংকের একটি শাখায় কর্মরত আছেন পটুয়াখালির জেলার মনির হোসেন। তিনি ১৩ বছর যাবত এটিএম বুথের নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি পুরান ঢাকার ফরিদাবাদ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। ছোট মেয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী, আর ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে।

মনির হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, ৮ হাজার টাকা বেতনে তিনি নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি করেন। নিয়মিত ৮ ঘণ্টা সাধারণ ডিউটি ও ৮ঘণ্টা ওভার টাইম করতে হয় তাকে। অর্থাৎ ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৬ঘন্টা দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সন্তানদের লেখাপড়া করাতে বর্তমানে খুবই সমস্যায় পরতে হয় মনির হোসেনের।

তিনি আরো বলেন, সকলে যখন ঈদ ও কুরবানিতে ছুটি নিয়ে গ্রামে যায় তখন তাদের মত সকল নিরাপত্তারক্ষীর মনে হাহাকার হয়। এছাড়াও বিশ্ব শ্রমিক দিবসে সকলের ছুটি থাকলেও তাদের ছুটি মেলেনা। তাদের বুক ফাটলেও মুখ ফোটে না। কারণ তাদের বিষয় দেখার কেউই নেই।

ঢাকা শহরের বিভিন্ন এটিএম বুথ ঘুরে দেখা গেছে, এসকল নিরাপত্তারক্ষীরা বিরামহীনভাবে ডিউটি পালন করে যাচ্ছেন। তবে তাদের জন্য বেশিরভাগ বুথেই নেই শৌচাগারের ব্যবস্থা। এছাড়াও খাবার পানিরও ব্যবস্থা নেই সেখানে। অনেক সময় বাধ্য হয়েই এটিএম বুথ রেখে ছুটতে হচ্ছে অন্যস্থানে। বুথে কর্মরতরা এ বিষয়ে দাবি জানালেও সুরাহা হয় না।

বছরের পর বছর অন্যের টাকা পাহারা দিয়ে আসছেন তারা। দিনরাত মিলিয়ে প্রায় ১৬ঘণ্টা ডিউটি করেন। এর বিনিময়ে পারিশ্রমিক বা বেতন পান ৭-৮ হাজার টাকা। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কাধে থাকায় বিশেষ দিনগুলোতে ছুটি পাননা তারা।

দেশের বিভিন্ন এলাকার রাস্তার পাশে টাকার যন্ত্র অর্থাৎ এটিএম বুথ দেখতে পাওয়া যায়। এসব বুথের পাশে সবসময়ই নিয়োজিত থাকেন একজন পাহারাদার বা নিরাপত্তাকর্মী। এটিএম বুথগুলোতে টাকা তুলতে গেলেই এ সকল টাকার পাহারাদারগণ বুথের দরজা খুলে দেন, আবার বেড় হওয়ার সময় একটা সালামও দেন তাঁরা। অনেকেই তাদের সালাম পেয়ে তৃপ্তি সহকারে চলে আসেন পকেট ভর্তি টাকা নিয়ে। এসকল মানুষদের জন্য সমাজের তেমন কেউই ভাবেন না। যারা অন্যের টাকা পাহারা দিয়ে আসছেন তারাই সমাজে বাস করছেন অর্থাভাবে। তাদের অনেকেরই জীবন যুদ্ধের গল্পটা একই রকমের হয়। (সুত্র: কালেরকন্ঠ)

ডেস্ক/বিডি

  • ছুটি নেই
  • টাকার পাহারাদার
  •    

    কপি করলে খবর আছে