এক পসলা বৃষ্টির জন্য দিনাজপুরে বিশেষ নামাজ

লেখক: শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর থেকে
প্রকাশ: ১ বছর আগে

কয়েক দিনের তীব্র তাপদাহে সারা দেশের ন্যায় নাভিশ্বাস উঠেছে দিনাজপুরের জনজীবনেও। সূর্যের প্রখরতায় অব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা। তাই, এক পসলা বৃষ্টির আশায় বিশেষ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনাজপুরে। বৈশাখের পাঁচ পেরিয়ে গেলেও দেখা নেই মেঘের। চলছে তীব্র তাপদাহ। প্রচণ্ড গরমে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর উঠেছে নাভিশ্বাস। এই রমজানে নিত্য পণ্যদ্রব্য বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রকৃতিও বিরূপ আচরণ করছে। এই রোদে মাঠে কাজ করতে পারছেন না খেটে খাওয়া মানুষেরা।

বুধবার (১৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮ টায় দিনাজপুর শহরের রামনগর ঈদগাহ মাঠে ইস্তেসকার বিশেষ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় যুব সমাজের আয়োজনে এই নামাজে ইমামতি করেন, দিনাজপুর বিরল উপজেলার শংকরপুর জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ আব্দুল্লাহ আল মোয়াক্ষির। তীব্র গরম থেকে পরিত্রাণ পেতে এই নামসজের আয়োজন বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। নামাজে অংশ নেয় নানা বয়সের মানুষ।

সত্তর বছর বয়সের মো. হাফিজুল ইসলাম জানালেন, দিন-রাত অস্বাভাবিক গরমে জীবন যায় যায় অবস্থা। তাই, এই নামাজের মধ্যদিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি,এক পসলা বৃষ্টির জন্য।

ইমাম আব্দুল্লাহ আল মোয়াক্ষির বলেন, আমাদের নবী (সা.) অনাবৃষ্টি এবং দূর্ভিক্ষের জন্য সাহাবিদের নিয়ে খোলা ময়দানে ইস্তেসকার নামাজ আদায় করেছিলেন। আমরাই তাই এই নামাজের আয়োজন করেছি। আল্লাহ পাক যদি মুখ ফিরে তাকান, তাহলে বান্দারা স্বস্তি পাবে।

আরও পড়ুন : ঠাকুরগাঁওয়ে মাতৃত্বকালীন ভাতা’র সাত লক্ষ টাকা নিয়ে উধাও উদ্যোক্তা

এদিকে দিনজপুর জেলার সিভিল সার্জন ডাক্তার এ এইচ এম বোরহানুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, অতিরিক্ত গরম তাপদাহে মানুষের হিট স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন, অতিরিক্ত ঘামের কারণে ইলেক্ট্রোলাইট ইন ব্যালেন্স হতে পারে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কিডনি বিকল, অজ্ঞান, মাসল পুল, সর্দিগর্মি বসে গিয়ে গলা বসে যাওয়া, নাক বন্ধ, কাশি, শ্বাসকষ্ট ধুলাবালি কারণে অ্যাজমা জনিত এলার্জি হতে পারে। এছাড়াও চোখ চুলকানো কনজাভ পাইলস কেনে সানবার্ন এলার্জি জাতীয় চুলকানি হয়ে থাকে এছাড়াও নাক দিয়ে রক্ত পড়া নাকের ভিতর শুষ্কতার জন্য রক্তনালী ফেটে যায়, এসব থেকে পরিত্রাণের উপায় প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার পানি, দুধ, স্যালাইন, শরবত ফলের রস খেতে হবে। রোদে যাবার আগে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যেমন- ছাতা ব্যবহার, সুরমার ব্যবহার, ছায়ায় অবস্থান পানি সাথে রাখতে হবে। তিনি দুপুর ১২ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত তাপদাহে রোদে না থাকতে জনসাধারণকে অনুরোধ করেন। দাবদাহে মানুষের পাশাপাশি পশু পাখিদেরও জীবন বিপর্যয়। রাস্তায় বসবাস কারি বোবা প্রাণীরা গরম সহ্য করতে না পেরে বাসা বাড়িতে আশ্রয় খুঁজছে।

দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ী এলাকার বাসিন্দা বাবু আহমেদ জানান, ওয়াটার লাইন মেশিন দিয়ে পানি উঠানো যায় না আর আগের মতো। পানির লেয়ার কমতে শুরু করেছে শহরে বিভিন্ন জায়গাতে।

মুন্সিপাড়ায় বসবাসরত বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিমন পাল জানান, আমার বাড়িতে ব্যবহৃত পানির মরট টি আর ভালো সার্ভিস দিচ্ছে না, মেকার দিয়ে দেখানো হলে জানতে পারলাম মটর ঠিক আছে পানির লেয়ার নেমে গেছে। তিনি জানান, আমার বাড়ির ৩য় ও ৪র্থ তলায় বসবাসরত ভাড়াটিয়াদের পানির সমস্যায় ভুগছেন গতসপ্তাহ থেকে, তাদের ব্যবহৃত পানির কলে পানি থাকছেনা সারা দুপুর, সকাল ও রাতে পর্যাপ্ত না, পানি না থাকায় গৃহস্থলী কাজের ব্যাঘাত ঘটছে।

দিনাজপুর পৌর সভার মেয়র জাহাঙ্গীর বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে পানি নেমে গেছে সেজন্য আমি বলবো আপনারা যারা বাসাবাড়িতে পানির পাম ব্যবহার করেন, তারা পানির ট্যংকে এলার্ম মেশিন লাগিয়ে দিন ট্যাংকি ভর্তি হয়ে গেলে ওভারফ্লো হয়ে পানির অপচয় হবে না। পানির অপচয় না করে সচেতন হোন পানির সঠিক ব্যবহারের জন্য জনসাধারণকে অনুরোধ করেছেন।মানুষের পাশাপাশি রাস্তায় বসবাসকারী পশুপাখিদের পিপাসা মেটানোর জন্য পানি খাওয়াতে বলেন মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।

দিনাজপুর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কতৃপক্ষ এর সহকারি প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান,জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিনাজপুরের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। এ কারণে ছোট বড় সকল ধরনের পাম্পে পানির মোটরে সরবরাহ কমে গেছে, ভূগর্ভস্থ একিউ রায়ের পানিস্বল্পতা দেখা দিয়েছে গ্রীম্মকাল এর জন্য এ পানিস্বল্পতা দেখা দিয়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে পানি লেয়ার উপরে চলে আসবে। বর্তমানে প্রচণ্ড দাবদাহে জন্য পানিস্বল্পতা ছাড়াও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং ভোল্টেজের প্রয়োজনের তুলনায় কম। পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত হলে পানি উত্তোলন সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী বিক্রয় বিতরণ বিভাগ ২( নেসকো ) দিনাজপুরে শাহাদাত হোসেন জানান, শহরে দিনের বেলা ডিমান্ড বিশ মেগাওয়াট, উৎপাদন হচ্ছে ১৪ মেগা মেগাওয়াট। লোডশেডিং হচ্ছে সাড়ে পাঁচ মেগাওয়াট। প্রয়োজনের তুলনায় উৎপাদন কম হওয়াতে লোডশেডিং হচ্ছে।

ডেস্ক/বিডি/শাহী

  • এক পসলা বৃষ্টি
  • বিশেষ নামাজ
  •    

    কপি করলে খবর আছে